Thursday, May 17, 2018

রোজার মাসে কয় বেলা ঔষধ খাচ্ছেন ? ঠিক হচ্ছে তো ?







রোজার মাসে কয় বেলা ঔষধ খাচ্ছেন ? ঠিক হচ্ছে তো ? 

সাধারণত আমরা ডাক্তারগন রোগীকে দিনে দুই বেলা কিংবা দিনে তিন বেলা কিংবা শুধু সকালে কিংবা শুধু রাতে ঔষধ প্রদান করে থাকি। আবার কখনো কখনো খালি পেটে, খাবার পর, ভরা পেটে, খাবার এক ঘন্টা পর হিসেবেও ঔষধ দিয়ে থাকি। রোগীদের কে এই ঔষধ সেবন পদ্ধতি সম্পর্কে জানাটা জরুরী।

সাধারণভাবে ঔষধ সেবনের সময়
1) দিনে দুই বেলা : দিনে দুই বেলা ঔষধ খাবার কথা বলা হলে তা হবে সকাল + রাত। এখানে দুই বেলার মধ্যে পার্থক্য হলো 12 (বার) ঘন্টা নূণ্যতম 9-10 ( নয়-দশ) ঘন্টা।
2) দিনে তিন বেলা : তিন বেলা বলতে সকাল + দুপুর + রাত। প্রকৃত পক্ষে প্রতি বেলার মাঝে আট ঘন্টা পার্থক্য থাকতে হয়, তবে তা নূন্যতম 6 (ছয়) ঘন্টা।
3) দিনে এক বার সকালে : এখানে সকালের ঔষধ বলতে দুটো বিশেষ দিক বোঝাতে পারে। ক) সারারাত অভুক্ত থেকে সকালে খেয়ে তারপর ঔষধ সেবন করা। খ) ঔসধ সারাদিন ধরে কাজ করবে তাই সকালে সেবন করা।
4) দিনে একবার রাতে : এখানে রাতে ঔষধ বলতেও দুটো বিশেষ বিষয় বোঝাতে পারে। ক) ঘুমানোর পূর্বে সেবন করলে এবং ঘুমিয়ে গেলে ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম অনূভূত হবে। খ) এগুলো খেলে ঘুম আসতে পারে তাই ঘুমানোর পূর্বে সেবন করা।

রোজার মাসে রোগীগন সাধারণত তিন বেলা এভাবে হিসেব করেন- 1) ইফতারের পর 2) রাতের খাবার 3) সেহরী । এখানে সন্ধ্যা 7 টা থেকে রাত 3.30 মিনিট পর্যন্তই (আট ঘন্টা 30 মিনিট) তিন বেলা হিসেব করতে হয়। সঠিক ঔষধ সেবন পদ্ধতি অনুযায়ী এখানে তিন বেলা হতে পারে না, বড়জোড় দুই বেলা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যে সকল সমস্যা হতে পারে-
 তাহলে যদি রোগী নিজের মত করে তিন বেলা হিসেব করে ঔষধ সেবন করে তবে তার মাত্রা বেশি হয়ে যেতে পারে, ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি হতে পারে, আবার রোগী যদি নিজে থেকেই একবেলা কমিয়ে দেয় তবে মাত্রা সঠিক নাও হতে পারে।
 যে ঔষধ অনেক্ষণ অভূক্ত থাকার পর সেবন করতে হয় (পূর্বের নিয়মে সকালে)তা যদি সেহরীর সময় খাওয়া হয় তবে তা ঠিক হয় না, যদি ইফতারের পর খাওয়া হয় তবে ঠিক হতে পারে (যদি চিকিৎসক পরামর্শ দেন)।
 যে সকল ঔষধে ঘুম হতে পারে সেগুলো যদি রাতে খাওয়া হয় তবে সেহরীর সময় উঠতে সমস্যা হবে। আবার না খেলে হয়ত অন্য সমস্যা হতে পারে। আবার সেহরীর সময় খেলে দিনের বেলা কাজ কর্মে ব্যঘাত ঘটতে পারে।

তাই রোজার পূর্বে প্রতিটি রোগীর (বিশেষত যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ঔষধ সেবন করছেন এবং তা ধারাবাহিক) উচিৎ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ঔষধের ডোজ (মাত্রা) পুণঃ নির্ধারন, ঔষধ পরিবর্তন ( যদি প্রয়োজন হয়)ইত্যাদি সম্পন্ন করা যেন রোজার মাসে রোজা রাখতে সমস্যা না হয়।

যদি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক দুরে থাকেন কিংবা তা সময় সাপেক্ষ হয় তবে নিকটস্থ একজন একই বিশেষঙ্গের পরামর্শ নিতে পারেন। না পাওয়া গেলে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। তাও সম্ভব না হলে অভিঙ্গ এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তার কে বলতে হবে রোগী রোজা রাখতে চাচ্ছেন, তা সম্ভব কি না? সম্ভব হলে ঔষধের মাত্রা কি হবে। পরবর্তীতে রোগী তার পূর্বের চিকিৎসকের নিকট পুনরায় যেতে পারবে।

এই মাহে রমজান মাসে সকলেই সুস্থ থাকুন। সুষ্ঠুভাবে রোজা পালন করুন। মহান আল্লাহ পাকের নিকট এই প্রার্থনা করছি।



রচনায়





রোজায় ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশনা




রোজায় ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশনা


১৯৯৭ সালের জুনে মরক্কোতে ‘ইসলামের দৃষ্টিতে সমসাময়িক চিকিৎসা সমস্যা’ (An Islamic View of Certain Contemporary Medical Issues) শিরোনামে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এই সেমিনারের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল কী কী মেডিকেলজনিত কারণে রোজার ক্ষতি হয় না। পরবর্তী সময়ে নবম ফিকাহ-মেডিকেল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে যৌথভাবে বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে আলোচনা হয়। এ আলোচনা যৌথভাবে জেদ্দার ইসলামিক ফিকাহ একাডেমি, মিসরের আল-আজহার ইউনিভার্সিটি, আলেকজান্দ্রিয়ায় অবস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ইসলামি শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের (আইএসইএসসিও) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। এই সেমিনারেও মূল আলোচ্য বিষয় ছিল কী কীভাবে ওষুধ সেবনে বা পরীক্ষা করলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
ইসলামি চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বসম্মতিক্রমে এমন কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেন, যাতে অসুস্থ ব্যক্তি রোজা রাখা অবস্থায় নিম্নলিখিত ব্যবস্থাপত্র নিলে এবং প্রয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে রোজা ভঙ্গ হবে না। এই সেমিনারের সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে।
 রোজা রাখা অবস্থায় চোখ, কান ও নাকে ড্রপ নেওয়া যাবে।
 হূদরোগীর বেলায় বুকে ব্যথা হলে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে বা ট্যাবলেট জিহবার নিচে নিতে পারবেন।
 মূত্রথলি পরীক্ষা বা এক্স-রে করার জন্য রোগীর প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে ক্যাথেটার অথবা অন্য কোনো যন্ত্র প্রবেশ করালে অথবা রেডিও-ওপেক ডাই প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হবে না।
 দাঁত তোলা, ড্রিলিং করা বা মেসওয়াক বা ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা যাবে, তাতে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে যেন এগুলো করার সময় পাকস্থলীতে থুতু বা টুথপেস্ট প্রবেশ না করে।
 রোগীর চামড়া, মাংস, অস্থিসন্ধি ও শিরায় ইনজেকশন দেওয়া যাবে। কিন্তু ডেক্সট্রোজ, প্রোটিনজাতীয় স্যালাইন ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।
 যে কেউ রক্ত অন্যকে দিতে পারবেন আবার জরুরি প্রয়োজনে নিজেও নিতে পারবেন।
 কোনো রোগী অক্সিজেন অথবা অজ্ঞানকারী গ্যাস (অ্যানেসথেসিয়া) নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
 ত্বকের মাধ্যমে শরীরের ভেতরে যায় এমন মলম, ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে।
 পরীক্ষার জন্য রোগীর শরীর থেকে রক্ত নেওয়া যাবে।
 হূদরোগে আক্রান্ত রোগী হার্টের এনজিওগ্রাম এবং কার্ডিয়াক ক্যাথেটার করা যাবে।
 রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বা চিকিৎসার অংশ হিসেবে এন্ডোস্কপি করলে রোজা ভাঙবে না।
 মুখ পরিষ্কারের জন্য মাউথ ওয়াশ বা গড়গড়া বা মুখে স্প্র্রে জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে, তবে যেন পাকস্থলীতে কোনো কিছু না যায়।
 লিভার বায়োপসি অথবা অন্য কোনো অঙ্গের বায়োপসি করলে রোজা নষ্ট হবে না।
নাকে স্প্রে বা হাঁপানি রোগীর বেলায় ইনহেলার জাতীয় কিছু নিলে কোনো সমস্যা নেই।
 রোগীর পায়ুপথে ইনজেকশন, ঔষধ অথবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আঙুল বা অন্য কোনো যন্ত্র প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না।
 জরায়ু পরীক্ষার জন্য শরীরে হিস্টারোস্কপি করা যাবে, এমনকি জরায়ুতে কোনো যন্ত্রপাতি বা অন্য কিছু পরীক্ষার জন্য প্রবেশ করালে রোজায় কোনো সমস্যা হবে না।
 জরুরি কোনো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে রোজা রাখা অবস্থায় করা যাবে।
 কিডনি অকেজো হলে রোগীর ডায়ালাইসিস করলে রোজা ভাঙবে না।



সংকলনে