Saturday, August 12, 2017

জন্মনয়িন্ত্রন পদ্ধতি সম্পর্ক ধারণা; পর্ব-4 : গর্ভধারণ







প্রেগন্যান্সি বা গর্ভধারণ
এমন একটি অবস্থা যেখানে জরায়ুতে ভ্রুন বৃদ্ধি পেতে থাকে সাধারণত গর্ভকাল হলো দিনের হিসেবে ২৮০ দিন বা সর্বশেষ মাসিকের তারিখ হতে ক্যালেন্ডার মাস দিন বা ৪০ সপ্তাহ  গর্ভ ধারন কালকে তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয় প্রতিটিকে ট্রাইমিস্টার বলা হয় ট্রাইমিস্টার গুলো হলো
) প্রথম ট্রাইমিস্টার: প্রথম হতে বারতম সপ্তাহ পর্যন্ত
) দ্বিতীয় ট্রাইমিস্টার: ১৩ তম হতে ২৮ তম সপ্তাহ পর্যন্ত
) তৃতীয় ট্রাইমিস্টার: ২৯ তম সপ্তাহ হতে গর্ভকালের শেষ সময় পর্যন্ত


গর্ভধারনের প্রক্রিয়া
গর্ভধারনের প্রক্রিয়াকে নিম্নলিখিত ধাপে প্রকাশ করা যেতে পারে
) একজন প্রজনন ক্ষম মহিলা যখন কোন জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি অবলম্বন ব্যতিরেকে কোন পুরুষের সাথে  যৌন  মিলন করে তখন মহিলার ভ্যাজাইনাতে পুরুষের সীমেন সঞ্চিত হয় এবং যৌন মিলনের সময় আভ্যন্তরিন স্ত্রী জননাঙ্গ সমূহে প্রচর তরল ক্ষরিত হয়

) এই সীমেনে  বিদ্যমান স্পার্ম বা শুক্রানু (স্বাভাবিক ভাবে সংখ্যায় কয়েক কোটি) স্ত্রী আভ্যন্তরিন জননাঙ্গে বিদ্যমান তরল পদার্থের মধ্যে সাঁতার কাটতে থাকে আবার যৌন মিলনের সময় মহিলাদের আভ্যন্তরিন জননাঙ্গে ভ্যাজাইনা হতে ফ্যালোপিয়ান টিউব সঞ্চালন হতে থাকে ফলে শুক্রানু তরলের মধ্যে সাতার কাটতে কাটতে ফ্যালোপিয়ান টিউবের দিকে যেতে থাকে এভাবে শুক্রানু স্ত্রী জননাঙ্গের অভ্যন্তরে সাধারণত ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত অবস্থানরত অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে

) যদি সময়ে মহিলার ওভুলেশন ঘটে থাকে এবং পুরুষের স্পার্ম বা শুক্রানু সক্রিয় থাকে তবে ওভাম বা ডিম্বানুর সাথে স্পার্ম মিলিত হয়ডিম্বানুর সাথে একটি মাত্র স্পার্ম মিলিত হতে পারে।

) ওভাম স্পার্মের মিলনের ফলে ওভামটি নিষিক্ত হয় এবং জাইগোট সৃস্টি করে সাধারণভাবে ফ্যালোপিয়ান টিউবের অভ্যন্তরে এই নিষিক্তকরন ও জাইগোট সৃস্টির ঘটনা  ঘটে

) এই জাইগোট  সাধারণ ভাবে ৬ষ্ঠ - ৮ম দিনে ইউটেরাস বা জরায়ুতে আসে এবং সেখানে প্রথিত হয় এই প্রক্রিয়াকে ইমপ্লান্টেশন বলা হয়

) ইমপ্লান্টেশন  হওয়ার পর জাইগোট ভ্রুনে রূপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি বিকাশের মাধ্যমে পুর্ণাঙ্গ নবজাতকে রূপান্তরিত হয় এবং  পুর্নাঙ্গ শিশু হিসেবে ভুমিষ্ট হয়



চিত্র: গর্ভাবস্থার সৃস্টি ( 1- ওভুলেশন, 2-ফার্টিলাইজেশন, 3- জাইগোট সৃস্টি, 4-7 ভ্র ুণে রূপান্তর ,  ইমপ্লান্টেশন )






চিত্র: গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি






চিত্র: গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি






গর্ভকালীন সময় মাসিক
যদি ডিম্বানু নিষিক্ত না হয় তবে আকস্মিক ভাবে রক্তের এস্ট্রোজেন প্রোজেস্টেরনের পরিমান কমে যায় বলে ওভুলেশনের পর ১৪ তম দিনে মাসিক (রক্তক্ষরণ) শুরু হয়
যদি ডিম্বানু নিষিক্ত হয় তবে তা পরবর্তীতে প্লাসেন্টা বা অমরা বা গর্ভফুল সৃষ্টি করে  প্লাসেন্টা বা অমরা বা গর্ভফুল প্রচুর পরিমান হিউমেন কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন হরমোন নিঃসরন করে যার প্রভাবে  এস্ট্রোজেন প্রোজেস্টেরন  নিঃসরনের কোন পরিবর্তন ঘটেনা এবং ফলশ্রুতিতে এন্ডোমেট্রিয়ামের বৃদ্ধি চলতে থাকে মাসিক বাঁধাগ্রস্ত হয় তাই গর্র্ভধারনকালীন সময়ে মাসিক হয়না



গর্ভধারণ সম্পর্কিত কিছু শব্দ পরিচিতি

প্রসব  : বাচ্চা জন্মদানের প্রক্রিয়াকে প্রসব বা পারচুরিশন বলে। গর্ভস্থ শিশু পরিণত হয়ে গেলে প্রসব ঘটে। প্রসব প্রক্রিয়া প্রাকৃতিক ভাবে ভ্যাজাইনা দিয়ে হতে পারে আবার কৃত্রিম ভাবে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পেট কেটে বের করে আনা হতে পারে। 

এবরশন বা গর্ভপাত : গর্ভস্থ শিশু ২৮ সপ্তাহ হবার পূর্বে গর্ভধারণের সমাপ্তি (অর্থাৎ ভ্যাজাইনা দিয়ে গর্ভস্থ উৎপাদি বের হয়ে আসা ) হলে তাকে এবরশন বা গর্ভপাত  বলা হয়।  প্রাকৃতিক ভাবেও হতে পারে আবার কৃত্রিম ভাবেও গটানো যেতে পারে।

পিউরপেরিয়াম : বাচ্চা প্রসবের পরবর্তী সপ্তাহকে পিউরপেরিয়াম বলে সময়ে  গর্ভকালীন সময়ে পরিবর্তিত অঙ্গ সমুহ (জরায়ু সংশ্লিষ্ট) স্বাভাবিক অবস'ায় (গর্ভ পূর্ববর্তী) ফিরে আসে


ল্যাকটেশন বা স্তন্যদান : স্তনের অভ্যন্তরে দুগ্ধ নিঃসরন থেকে শুরু করে বৃন্ত দ্বারা বাইরে বের হওয়া পর্যন্ত সকল প্রক্রিয়ার সমন্বিত নাম স্তন্যদান সাধারণত শিশু ঠিকমত মায়ের বুকের দুধ খেলে প্রসবের মাস পর্যন্ত সর্বোচ্চ ল্যাকটেশন ঘটে




এই পর্বের এখানেই সমাপ্তি । আগামী পর্বে রয়েছে আমাদের দেশে প্রচলিত জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি। 



পূর্ববর্তী পর্বসমূহ








সতর্কীকরণ 



[ সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত; কপিরাইটকৃত রচনা।  রচয়িতার লিখিত অনুমতি ব্যতিত এই রচনা বা এর কোন অংশ বিশেষের অনুবাদ বা কোন প্রকারে এর অনুলিপি (যেমন- মুদ্রণ, ফটোস্ট্যাট, কম্পিউটার কম্পোজ বা অন্য কোন উপায়ে) তৈরি, সংরক্ষণ, বিক্রয়, বিতরণ, নিয়মবহির্ভূতভাবে কোন পুস্তকে বা প্রকাশনায় ব্যবহার কিংবা ওয়েব সাইটে প্রকাশ বাংলাদেশ কপিরাইট আইন ২০০৫ অনুযায়ী  শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।  ]

উপরোক্ত রচনাটি ডাঃ আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম রচিত প্রকাশিতব্য পুস্তক ’’জন্মনিয়ন্ত্রন ’’ থেকে নেয়া হয়েছে।

তবে কোনরূপ পরিবর্তন না করে লিংক হিসেবে ফেসবুকে বা ইন্টারনেটে শেয়ার করা যাবে।
কপি-পেস্ট আইনত দন্ডনীয় বলে বিবেচিত হবে ।







Thursday, August 10, 2017

Google Books -a প্রকাশিত আমার লেখা মেডিকেল ইথিকস বই।

.





আমার লেখা বই মেডিকেল ইথিকস ( চিকিৎসা নীতিশ্বাস্ত্র)। মেডিকেল  ইথিকস বিষয়ের উপর রচিত একমাত্র বাংলাদেশি বই।  


গুগল বুকস -এ আমার এই বইটি দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।


https://books.google.com.bd/books?id=7IdcDaCGkpEC&pg=PA34&lpg=PA34&dq=dr+abdullah+all+qayyum&source=bl&ots=Jax-Zv7pL1&sig=1zkm3dm2laBqNgRyPf2vBGOJOmY&hl=en&sa=X&redir_esc=y#v=onepage&q=dr%20abdullah%20all%20qayyum&f=false


https://books.google.com.bd/books?id=7IdcDaCGkpEC&pg=PA34&lpg=PA34&dq=dr+abdullah+all+qayyum&source=bl&ots=Jax-Zv7pL1&sig=1zkm3dm2laBqNgRyPf2vBGOJOmY&hl=en&sa=X&redir_esc=y#v=onepage&q=dr%20abdullah%20all%20qayyum&f=false


Sunday, August 6, 2017

জন্মনয়িন্ত্রন পদ্ধতি সম্পর্ক ধারণা; পর্ব-৩ : স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ





স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ ঃ

যে সকল অঙ্গ মহিলাদের প্রজনন ক্রিয়ায় অংশ গ্রহন করে তাদের ফিমেল রিপ্রোডাকটিভ অরগাব বা স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ বা স্ত্রী জননাঙ্গ বলা হয়। স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ সমূহ-

আভ্যন্তরিন স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ 
  1. এক জোড়া (ডান বাম) ডিম্বাশয় বা ওভারী : অবস্থান- পেটের নিচের অংশে। প্রধান কাজ-       ওভাম বা ডিম্বানু তৈরিস্ত্রী প্রজনন হরমোন তৈরি।
  2. এক জোড়া (ডান বাম) ফ্যালোপিয়ান টিউব : অবস্থান-পেটের নিচের অংশে। প্রধান কাজ-       ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বানু (ওভাম) গ্রহন করা, নিষিক্ত করণ (শুক্রানু ডিম্বানুর মিলন) স্থান হিসেবে কাজ করা এবং নিষিক্ত ডিম্বানু গর্ভাশয় পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যাওয়া।
  3. একটি ইউটেরাস বা গর্ভাশয় : অবস্থান-পেটের নিচের অংশে। প্রধান কাজ-            ভ্রুন লালন পালন করে। মাসিক চক্রের লক্ষন প্রকাশ করে।
  4. একটি ভ্যাজাইনা বা যৌন পথ : অবস'ান পেটের নিচের  অংশে তবে এর একটি খোলা রন্ধ্র ভালভাতে অবসি'ত। প্রধান কাজ: যৌন ক্রিয়ার পথ, বাচ্চা প্রসবের পথ, মাসিকের পথ।
  5.  এক জোড়া (ডান বাম) বার্থোলিন গ্রনি': অবস'ান-ভ্যাজাইনার রন্ধ্রপথের ঠিক দুই পাশে। প্রধান কাজ- যৌণ উত্তেজনার সময় পিচ্ছিল তরল পদার্থ তৈরি।
  6.  প্লাসেন্টা বা অমরা (শুধুমাত্র গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে): অবস'ান- ইউটেরাসের অভ্যন্তরে। প্রধান কাজ-মা থেকে ভ্রুনের মাঝে রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন বস' বিভিন্ন উপাদান আদান প্রদান এবং হরমোন তৈরি। 








চিত্র: মহিলাদের আভ্যন্তরিন জননাঙ্গ



বাহ্যিক স্ত্রী জননাঙ্গ

)       ভালভা : মহিলাদের দুই উরুর মধ্যবর্তী 'ানে বাহ্যিক ভাবে যে অঙ্গ গুলো রয়েছে তাদের সমন্বিত ভাবে ভালভা বলা হয় ভালভাতে রয়েছে-
  1. মনস পিউবিস : পিউবিক সিম্ফাইসিসের সম্মুখের গোলাকার উন্নতি। এটি ত্বকের নিচে একগুচ্ছ চর্বি সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয়। বয়সন্ধির সময় এটি কেশ দ্বারা আবৃত হয়।
  2. ল্যাবিয়া মেজরা : মনস পিউবিস হতে নিম্ন-পশ্চাৎ দিকে গমনকারী দুটি উলম্ব ত্বকের ভাঁজ বিশেষ। ল্যাবিয়া মেজরা পিউডেন্ডাল ক্লেফট বা রিমার সীমা তৈরি করে (যেখানে ভ্যাজাইনা ইউরেথ্রার রন্ধ্র পথ বিদ্যমান)  প্রতিটি ল্যাবিয়ার বাহ্যিক পৃষ্ঠ পিগমেন্টেড (গাঢ় বর্ণ) এবং দৃঢ় কেশ দ্বারা আবৃত। আভ্যন্তরিন পৃষ্ঠ মসৃণ এবং বৃহৎ সিবাসিয়াস ফলিকল বহন করে।
  3. ল্যাবিয়া মাইনরা: ল্যাবিয়া মাইনরা হলো দুটি ক্ষুদ্রাকৃতির ত্বকের ভাঁজ (কিউনেটিয়াস ফোল্ড) যা ল্যাবিয়া মেজরার মাঝে অবস'ান করে। এটি কেশ বিহীন। কুমারীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ল্যারিয়া মাইনরার পশ্চাৎ প্রান্ত একটি ত্বকের ভাঁজ দ্বারা মধ্যরেখা বরাবর সংযুক্ত থাকে, একে ল্যাবিয়ার ফ্রেনুলাম বা ফরচিট বলে।
  4.  ক্লাইটোরিস : ক্লাইটোরিস হলো একটি ইরেকটাইল বস' (উত্থানক্ষম) ক্লাইটোরিস মসৃন ত্বক দ্বারা আবৃত থাকে। এর উন্মুক্ত অংশ (গ্ল্যানস ক্লাইটোরিস) অতিমাত্রায় স্পর্শ কাতর।
  5.  ভেস্টিবুল : ল্যাবিয়া মাইনরার মাঝের অংশকে ভ্যাজাইনার ভেসটিবুল বলে। এখানে ইউরেথ্রা, ভ্যাজাইনা বার্থোলিন গ্ল্যান্ড-এর রন্ধ্রপথ দেখা যায়।
  6.  বাহ্যিক মুত্র রন্ধ্র : এটি গ্ল্যান্স ক্লাইটোরিসের . সেমি পশ্চাতে এবং ভ্যাজাইনার ঠিক সম্মুখে অবসি'ত।
  7. ভ্যাজাইনাল অরিফিস বা জননপথের রন্ধ্র বা যোনী :এটি একটি মিডিয়ান স্লিট (মধ্যরেখা বরাবর রন্ধ্র) যা ইউরেথ্রার রন্ধ্র পথের ঠিক নিচে পেছনে অবস'ান করে। কুমারীদের ক্ষেত্রে এটি ক্ষুদ্র রন্ধ্র যুক্ত একটি মিউকাস মেমব্রেনের ভাঁজ দ্বারা আবৃত যাকে হাইমেন বা সতিচ্ছদ্দ নামে অভিহিত করা হয়। প্রথমবার যৌনমিলন বা অন্যান্য কারনে এটি বিদীর্ণ হতে পারে।





চিত্র: মহিলাদের বাহ্যিক জননাঙ্গ (ভালভা)





) এক জোড়া (ডান বাম) স্তন : এটি স্ত্রী জনন তন্ত্রের একটি আনুসাঙ্গিক অঙ্গ।  স্তন একটি গ্ল্যান্ড যা বিভিন্ন হরমোনের প্রভাবে দুগ্ধ তৈরি নিঃসরণ করে। এই দুগ্ধ নবজাতকের আদর্শ খাদ্য। স্তনের বাহ্যিক অংশ সমূহ
  1. নিপন বা স্তন বৃন্ত: এটি একটি কণকাকৃতি বা বর্তুলাকার বিবর্ধণ যা স্তনের কেন্দ্রে চতুর্থ ইন্টারকোস্টাল স্থান বরাবর  (শোয়া অবস্থা) অবস্থা করে এটি ইরেকটাইল (উত্থানক্ষম) মাসকুলার টিস্যু দ্বারা গঠিত। নিপল- দুগ্ধ নিঃসরণের জন্য ১৫-২০ টি রন্ধ্রপথ রয়েছে।
  2. এরিওলা: এটি চক্রাকার রঞ্জিত (গাঢ় বর্ণ বিশিষ্ট অর্থে) অঞ্চল যা নিপল বা স্তন বৃন্তের ভিত্তির চারপাশে অব করে। প্রথম গর্ভধারণের পর গাঢ়ত্ব অপ্রত্যাবর্তনশীল ভাবে আরো গাঢ় বর্ণ ধারণ করে। এরিওলার বাইরের সীমায় কিছুসংক্ষক বিশেষ সিবাসিয়াস গ্রনি' থাকে যাদের মন্টেগুমেন্টারী টিউবারকল নামে অভিহিত করা হয়।
  3. বডি বা দেহ:বডি বা দেহ আকারে গোলাকার।
  4. টেইল বা পুচ্ছ: এটি এক্সিলা পর্যন্ত বিস্তৃত।



চিত্র: স্তনের বাহ্যিক গঠন



স্ত্রী জনন কোষ :
ওভাম হলো স্ত্রী জনন কোষ। এটি . মিলি মিটার ব্যস বিশিষ্ট একটি অতি ক্ষুদ্র কোষ। এটি ওভারীতে সৃষ্টি হয়। ওভারীতে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অপরিপক্ক ওভাম থাকে। সাধারণত প্রজননক্ষম মহিলাদের প্রতি মাসে একটি ওভারী থেকে একটি করে ওভাম পরিপক্ক হয়। পরিপক্ক হওয়ার পর এটি ওভারী বিদীর্ণ করে বের হয়ে আসে এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের অভ্যন্তরে অবস্থা করে। এভাবে পরিপক্ক ওভাম ওভারী থেকে বের হয়ে আসাকে ওভুলেশন বলা হয়। ওভুলেশন সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার ১২ তম দিন হতে ১৬ তম দিনের মধ্যে  হয়। সাধারণত একটি ওভাম  ২৪ ঘন্টা বাঁচতে পারে এমতাবস্থা ওভাম শুক্রানুর সংস্পর্শে আসলে তা নিষিক্ত হয় এবং প্রথমে জাইগোট পরবর্তীতে ভ্রুনে রূপান্তরিত হয় এবং গর্ভসঞ্চার হয়। যদি এই সময়ের মধ্যে এটি নিষিক্ত না হয় তবে তা মৃত অবস্থা ইউটেরাসে চলে আসে এবং মাসিকের সাথে বের হয়ে যায়। 

  


চিত্র: ওভাম বা স্ত্রী প্রজনন কোষ


স্ত্রী প্রজনন হরমোন:
স্ত্রী প্রজননে বেশ কিছু ভুমিকা পালন করে। উল্লেখযোগ্যগুলো হলো

) এস্ট্রোজেন: এস্ট্রোজেন একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিমেল  সেক্স হরমোন। এটি ওভারী হতে নিঃসৃত হয়। এস্ট্রোজেনের কাজ
  1.  ওভারী বা ডিম্বাশয়: ফলিকল (ডিম্বানুর প্রাথমিক অবস') বিকাশে উদ্দিপনা প্রদান করে।
  2.  ফ্যালোপিয়ান টিউব: সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, ক্ষরন বৃদ্ধি করে।
  3.  গর্ভাশয়/ জরায়ু :এন্ডোমেট্রিয়ামের প্রলিফারেশন পর্যায় সৃষ্টি কওে, গর্ভাশয়ের আকার বৃদ্ধি করে।
  4. জননপথ (ভ্যাজাইনা): আবরনীকলার বিকাশ সাধন
  5. স্তন: গাঠনিক কলার বিকাশ, নালীকা ব্যবস'ার বিকাশ, চর্বি সঞ্চয়।
  6. অন্যান্য : মাধ্যমিক যৌণ বৈশিষ্ট্য বিকাশ করে। চর্বি সঞ্চয়্র। অসি' বৃদ্ধিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। ত্বক কোমল মসৃন করে।

) প্রোজেস্টেরন: এটি মহিলাদের ২য় প্রধান হরমোন।  প্রোজেস্টেরনের কাজ 
  1. গর্ভাশয় / জরায়ু : এন্ডোমেট্রিয়ামের ক্ষরণ পর্যায় সৃষ্টি করে। গর্ভকালীন জরায়ুর সংকোচন প্রতিহিত করে।
  2. ফ্যালোপিয়ান টিউব: ক্ষরন বৃদ্ধি করে।
  3. স্তন: এলভিওলাই লবিউলের বিকাশ সাধন করে। স্তনকে দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য প্রস' করে।
  4. জননপথ: আবরনী কলার নিঃসরন বৃদ্ধি করে।
  5. অন্যান্য : দেহের ইলেক্ট্রলাইট সমতা রক্ষা করতে সাহায্য করে।

) টেস্টোস্টেরন: এটি মূলত একটি পুরুষ হরমোন, তবে স্ত্রী দেহে স্বল্পমাত্রায় বিদ্যমান।  মহিলাদের ক্ষেত্রে টেস্টোটেরনের উৎস: ওভারী, এডরেনাল গ্রনি' মহিলাদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরনের কাজ -মহিলাদের যৌনাকাঙ্খা বৃদ্ধি করে , লোম উদ্গম করায় (বগল, নাভীর নিচে)

) প্রোলাক্টিন : মস্তিস্কের পিটুইটারী গ্ল্যান্ড হতে নিঃসৃত। এটি দুগ্ধ নিঃসরনের জন্য স্তন কে প্রস' করে।

) অক্সিটসিন- মস্তিস্কের পিটুইটারী গ্ল্যান্ড হতে নিঃসৃত। প্রসবের সময় জরায়ুর সংকোচন করে, স্তন দুগ্ধ নিঃসরনে ভূমিকা পালন করে।

) কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন : প্লাসেন্টা হতে তৈরি হয়। এই  হরমোন গর্ভাবস'ায়ওভারীর হরমোন নিয়ন্ত্রন করে

উপরোক্ত আরো কিছু হরমোন রয়েছে যেগুলো প্রজননে ভুমিকা পালন করে।


  
মাসিক চক্র ঃ
মহিলাদের জরায়ু অন্যান্য জননাঙ্গে (ওভারী, জরায়ু মুখ জনন পথ) আবর্তনমুলক যে পরিবর্তন হয় এবং জরায়ু থেকে রক্ত ক্ষরন (মাসিক) অন্তবর্তীকাল সমন্বয়ে প্রকাশিত হয় তাকে মাসিক চক্র বলে। একে মহিলাদের মাসিক জনন চক্র বলে। এই চক্রের স্বাভাবিক 'ায়ীত্বকাল গড়ে ২৮ দিন। মাসিক চক্রের পর্যায় সমুহ

) প্রলিফারেটিভ (বৃদ্ধি) পর্যায়- একে এস্ট্রোজেনিক পর্যায়ও বলা হয়। 'ায়ীত্বকাল- -১০ দিন। পর্যায়ে জরায়ুর অভ্যন্তরস' স্তর আকারে বৃদ্ধি পায়।

) ক্ষরণ (সিক্রেটরি) পর্যায়- একে প্রজেস্টেরন জণিত পর্যায়ও বলা হয়। এর 'ায়ীত্বকাল- -১০ দিন। পর্যায়ে জরায়ুর অভ্যন্তরস' টিস্যুগুলো বিকশিত ক্ষরণক্ষম হয় যাতে জাইগোট এখানে প্রতিস'াপিত হতে পারে।

) মাসিক পর্যায় - একে রক্ত ক্ষরণ পর্যায় বলে। যদি নিষিক্তকরণ না ঘটে তবে পর্যায় ঘটে। এর স্থায়ীত্বকাল - দিন। পর্যায়ে এন্ডোমেট্রিয়াম (আভ্যন্তরিন স্তর) ধ্বংশ প্রাপ্ত হয়। ধ্বংশ প্রাপ্ত স্তর খসে পড়ে। জরায়ুর সংকোচন ঘটে। ধ্বংশপ্রাপ্ত স্তর রক্ত সহযোগে জরায়ু থেকে বের হয়ে আসে। এভাবে ধ্বংশপ্রাপ্ত স্তর রক্ত সহযোগে জরায়ু থেকে বের হয়ে আসাকে মিন্সট্রুয়েশন বা মাসিক বলা হয়। সাধারণত ২৮ দিন পর পর মাসিক হয়ে থাকে। সাধারণভাবে মাসিকের সময় ৩০-৭০ মিলি রক্ত দেহ থেকে বের হয়ে যায়। বয়সন্ধিকালে ১১-১৪ বছর বয়সে প্রথম মাসিক হয় ৪৫-৫৫ বছর বয়সের মধ্যে মাসিক স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। জীবনের প্রথম মাসিক থেকে শেষ মাসিক পর্যন্ত সময়টুকুই মহিলাদের প্রজনন সময়।



মহিলাদের প্রজননক্ষম হওয়ার লক্ষণ
প্রায়মারী সেক্সুয়াল অরগান হতে নিসৃত হরমোনের ( অন্যান্য) প্রভাবে বয়সন্ধিকালে মানবদেহে কিছু শারীরিক বা আচরণগত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় যা তার প্রজনন সক্ষমতাকে নির্দেশ করে। পরিবর্তনগুলো হলো

  1. মাসিকের সুচনা।
  2. স্তনের বিবৃদ্ধি।
  3. আনুসাঙ্গিক জনন  অঙ্গের বিকাশ।
  4. কণ্ঠ স্বরের পরিবর্তন
  5. লোম উদ্গমন; বগলদেশীয়, নাভীর নিচে
  6. পেলভিসের  (কোমড়ের হাড়) বিবৃদ্ধি।
  7. দেহ কাঠামোত্বকের নিচে চর্বির বিস্তার  এবং নারীর ন্যায় দেহ গঠন।
  8. ত্বকের পরিবর্তন - সেবাসিয়াস গ্রনি' নিঃসরন। ফলে ত্বক তৈলাক্ত হয়, ব্রণ সৃস্টি হয়।
  9. মানসিক পরিবর্তন - বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন।



মহিলাদের যৌনক্রিয়া
যে প্রক্রিয়ায় মহিলাদের যৌনকার্য সম্পাদিত হয়। এর পর্যায় সমুহ
ক) উত্থান- যৌন উদ্দিপনা পেলে মহিলাদের স্তনের এরিওলা, জননপথের প্রবেশমুখ ক্লাইটোরিসে অবসি' আর্টারিওল প্রসারিত হয় ফলে সেখানে প্রচুর পরিমানে রক্ত প্রবেশ করে এবং দৃঢ়তা লাভ করে (ফলে ভ্যাজাইনা পেনিসকে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারে)

খ) পিচ্ছিলকরন - লেবিয়া মাইনোরার নিচে দুইপাশে অবসি' দুটি বার্থোলিন গ্রনি' এবং জনন পথের (ভ্যাজাইনা) আবরনী কলা থেকে পিচ্ছিল পদার্থ নির্গত হয়

গ) সঙ্গম: ভ্যাজাইনাতে অবস্থানরত অবস্থা পেনিসের ভেতরগামী   বহির্গামী সঞ্চালন।

ঘ)  পরিতৃপ্তি - যখন স্থানিক মানসিক উদ্দিপনা সবোর্চচ পর্যায়ে পৌছায় তখন মহিলারা পরিতৃপ্তি লাভ করে (একে মহিলাদের চুড়ান্ত পরিনতি বা ক্লাইমেক্স বলে) সময় আভ্যন্তরিন জননাঙ্গের ক্ষরণ বেড়ে যায় পেরি এনাল পেশী ছন্দাকারে সংকুচিত হতে থাকে , ফেলোপিয়ান টিউবের সঞ্চালন বেড়ে যায় জরায়ু মুখ (সারভিক্স) প্রসারিত হয় ফলে শুক্রানু সহজেই ফ্যালোপিয়ান টিউব পর্যন্ত পরিবাহিত হতে পারে এবং নিষিক্ত করন হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।






এই পর্বের এখানেই সমাপ্তি। আগামী পর্বে রয়েছে গর্ভধারন সম্পর্কিত তথ্য


পূর্ববর্তী পর্বসমূহ







সতর্কীকরণ 




[ সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত; কপিরাইটকৃত রচনা।  রচয়িতার লিখিত অনুমতি ব্যতিত এই রচনা বা এর কোন অংশ বিশেষের অনুবাদ বা কোন প্রকারে এর অনুলিপি (যেমন- মুদ্রণ, ফটোস্ট্যাট, কম্পিউটার কম্পোজ বা অন্য কোন উপায়ে) তৈরি, সংরক্ষণ, বিক্রয়, বিতরণ, নিয়মবহির্ভূতভাবে কোন পুস্তকে বা প্রকাশনায় ব্যবহার কিংবা ওয়েব সাইটে প্রকাশ বাংলাদেশ কপিরাইট আইন ২০০৫ অনুযায়ী  শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।  ]

উপরোক্ত রচনাটি ডাঃ আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম রচিত প্রকাশিতব্য পুস্তক ’’জন্মনিয়ন্ত্রন ’’ থেকে নেয়া হয়েছে।

তবে কোনরূপ পরিবর্তন না করে লিংক হিসেবে ফেসবুকে বা ইন্টারনেটে শেয়ার করা যাবে।
কপি-পেস্ট আইনত দন্ডনীয় বলে বিবেচিত হবে ।