Saturday, August 5, 2017

জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা; পর্ব-2 : পুরুষ প্রজনন অঙ্গ








পুরুষ প্রজনন অঙ্গ
যে অঙ্গসমূহ পুরুষের প্রজনন ক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে তাদের পুরুষ প্রজনন অঙ্গ বা মেল রিপ্রোডাকটিভ অরগান  বা পুরুষ যৌনাঙ্গ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । মেল রিপ্রোডাকটিভ অরগান  বা পুরুষ প্রজনন অঙ্গ বা পুরুষ যৌনাঙ্গ সমূহ


ক) বাহ্যিক
১.  একটি পেনিস বা শিশ্ন বা পুরুষাঙ্গ
২.একটি স্ক্রোটাম বা অন্ডথলি

খ) আভ্যন্তরিন
১. এক জোড়া  (ডান ও বাম)টেস্টিস
২. এক জোড়া এপিডিডাইমিস
৩. এক জোড়া ভাস ডিফারেন্স
৪. এক জোড়া সেমিনাল ভেসিকল
৫. এক জোড়া ইজাকুলেটরি ডাক্ট
৬. একটি প্রোস্টেট
৭. এক জোড়া বাল্বো-ইউরেথ্রাল গ্ল্যান্ড





চিত্র:  পুরুষ প্রজনন অঙ্গ সমূহ




পুরুষ প্রজনন অঙ্গ সমূহের অবস্থান ও প্রধান কাজ 

ক) টেস্টিস:: অবস্থান- অন্ডকোষ অন্ডথলির অভ্যন্তরে। প্রধান কাজ - শুক্রানু (স্পার্মটোজোয়া) তৈরি, পুরুষের প্রজনন হরমোন নিঃসরন  । 

খ) স্ক্রোটাম: অবস্থান- অন্ডথলি পেরিনিয়াম নামক অঞ্চলে যা দুই উরুর মধ্যবর্তী স্থানে অবসি'ত। প্রধান কাজ -অন্ডকোষকে আবরন করে রাখে, অন্ডকোষকে  রক্ষা করে

গ) পেনিস বা শিশ্ন : অবস্থান- দুই উরুর মধ্যবর্তী স্থানে । প্রধান কাজ -পুরুষের জননক্রিয়ার অঙ্গ
ঘ) প্রোস্টেট : অবস্থান-ইউরিনারী ব্লাডারের (মূত্রথলি) নিকটে ইউরেথ্রার (মূত্রনালী) প্রথম অংশের চারপাশে।  প্রধান কাজ: প্রোস্টেটিক তরল নিঃসরন করে যা বীর্যের একটি উপাদান। 

ঙ) এপিডিডাইমিস: অবস্থান- টেস্টিস এর নিকটে। প্রধান কাজ -অন্ডকোষের অভ্যন্তর থেকে থেকে ভাজ ডিফারেন্স পর্যন্ত শুক্রানু বহন করে, শুক্রানুর ধারন হিসেবে কাজ করে।

চ) ভাজ ডিফারেন্স বা শুক্রনালী : অবস্থান- টেস্টিস থেকে ত্বকের নিচ দিয়ে ইনগুইনাল ক্যানেল নামক পথ অতিক্রম করে এবডোমেন (উদর গহবর বা পেটের অভ্যন্তরে) পর্যন্ত। প্রধান কাজ-এপিডিডাইমিস থেকে শুক্রানু ইজাকুলেটরি ডাক্ট পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যায়।

ছ) সেমিনাল ভেসিকল : অবস্থান-এবডোমেন -এর নিচের অংশে। প্রধান কাজ - বীর্যের একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে, এর ফ্রুক্টোজ শুক্রানুর পুষ্টি যোগায়। 

জ) ইজাকুলেটরি ডাক্ট : অবস্থান- এবডোমেন -এর নিচের অংশে । প্রধান কাজ- উত্তেজনার সময় মুত্রনালীতে বীর্য পৌছে দেয়।

ঝ) বাল্বো-ইউরেথ্রাল গ্ল্যান্ড: অবস্থান - ইউরেথ্রার গোড়ার দিকে পিছনে ও পার্শ্ব দিকে অবস্থিত। এর প্রধান কাজ -যৌণ উত্তেজনা প্রাপ্ত হলে গ্ল্যান্ডদুটি স্বচ্ছ পিচ্ছিল পদার্থ নিঃসরণ করে এভাবে সঙ্গমক্রিয়ার সাহায্য করে (সঙ্গমপথকে পিচ্ছিল রাখে)। সিমেনের পরিমান বৃদ্ধির জন্য ক্ষরণ করে। 


পুরুষ প্রজনন কোষ
পুরুষ প্রজনন কোষকে শুক্রানু বলা হয়। এটি দেখতে কিছুটা ব্যাঙ এর বাচ্চার মত। এটি  টেস্টিস বা অন্ডকোষের অভ্যন্তরে  তৈরি হয়। টেস্টোস্টেরন নামক হরমোনের প্রভাবে এটি তৈরি হয়। 



সাধারণ অনুবিক্ষণ যন্ত্রের নিচে শুক্রানুকে এমন দেখায়







চিত্র শুক্রানু



পুুরুষ প্রজনন হরমোন 
দেহের বৃদ্ধি বিকাশ ও ক্রিয়ার জন্য হরমোন অত্যাবশ্যক। মানব দেহে বিভিন্ন হরমোন রয়েছে যার ভিন্ন ভিন্ন কাজ রয়েছে। পুরুষের প্রধান প্রজনন হরমোন হলো টেস্টোস্টেরন। এটি টেস্টিসে (অন্ডকোষে) তৈরি হয়। এর প্রধান কাজ দেহকে পুরুষের ন্যায় গঠন দেয়া, পেশী ও হাড়কে মজবুত করা, প্রজনন অঙ্গ গুলোকে কর্মক্ষম করে তোলা ইত্যাদি। টেস্টোস্টেরন ছাড়াও আরও কিছু হরমোন রয়েছে যা পুরুষ প্রজননে ভুমিকা পালন করে। 



সিমেন বা বীর্য
সেমিনাল ভেসিকল , টেসটিস , প্রোষ্টেট এবং বালবো - ইউরেথ্রার  গ্ল্যান্ড- এর  ক্ষরনের  সমন্বয়ে  গঠিত তরল যা পুরুষের যৌন উত্তেজনার  সময়  মুত্রনালী মধ্যে দিয়ে নির্গত হয়। এই বীর্য
 নির্গত হওয়াকে ইজাকুলেশন বা স্খলন বা বীর্যপাত বলা হয়। প্রতি বীর্যপাতে প্রায় 2-5 মিলি সিমেন বা বীর্য নির্গত হয়। সিমেন বা বীর্যের উপাদানগুলো হলো 
     ক) স্পার্মাটোজোয়া বা শুক্রানু  (প্রতি স্খলনে প্রায় 60-150 মিলিয়ন ),
     খ) সেমিনাল ভেসিকল , প্রোষ্টেট এবং বালবো - ইউরেথ্রার  গ্ল্যান্ডের নিঃসরন। 


সিমেন বা বীর্য গঠন প্রক্রিয়া
সিমেন গঠনের প্রক্রিয়াকে নিম্নভাবে পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে ।
প্রথমে টেস্টিস হতে স্পার্মাটোজোয়া বা শুক্রানু নির্গত হতে থাকে এবং এপিডিডাইমিসে গিয়ে জমা হয় ।
এর পর এপিডিডাইমিস হতে ভাস ডিভারেন্সের মধ্যে দিয়ে স্পার্মাটোজোয়া সেমিনাল ভেসিকলে পৌছায় এবং সেখানে সেমিনাল ফ্ল ‍ুইডের ( সেমিনাল ভেসিকলের সৃষ্ট তরল) সাথে মিশ্রিত হয়।
উপরোক্ত মিশ্রন পরবর্তীতে ইজাকুলেটরি ডাক্ট হয়ে ইউরেথ্রাতে পৌছায় এবং এখানে প্রোস্টেটিক ফ্ল ‍ু ইডের (প্রোস্টেট কর্তৃক সৃস্ট তরল) সাথে মিশ্রিত হয়।
উপরোক্ত মিশ্রন পরবর্তীতে মুত্রনালীতে বাল্বোইউরেথ্রাল গ্ল্যান্ড নিঃসৃত তরলের সাথে মিশ্রিত হয়।
এর পর এই সিমেন ইজাকুলেশনের মাধ্যমে বাইরের দিকে বের হয়ে যায়।

পুরুষ যখন যৌণক্রিয়া করতে থাকে তখন তার পরিতৃপ্তি হলে সিমেন তৈরি শুরু হয় । এ ক্ষেত্রে এপিডিডাইমিস হতে মুত্রনালী পর্যন্ত বহিমুখী সন্চালন ঘটতে থাকে ।  ফলশ্রুতিতে সিমেন বা বীর্য
বাইরে বেরিয়ে আসে।





চিত্র: সীমেন তৈরি ও নিস্কাশনের প্রক্রিয়া





পুরুষের যৌনক্রিয়া
প্রাকৃতিক ভাবে মানব প্রজননের জন্য যৌনক্রিয়া/যৌন মিলন আবশ্যক। এই যৌনমিলনে পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের ভুমিকা রয়েছে। পুরুষের যৌনক্রিয়ার পর্যায় সমুহ-

ক) পেনিস বা শিশ্নের উত্থান (দৃঢ় ও দীর্ঘ হওয়া) : যৌণ উত্তেজনার  (স্পর্শ, দর্শন, শ্রবণ বা মানসিক ) উপস্থিতিতে পেনিসের আর্টারীসমূহ প্রসারিত হয় এবং ইরেকটাইল টিস্যুর মাঝে রক্ত প্রবেশ করতে থাকে। ফলে ইরেকটাইল টিস্যু সমূহ দীর্ঘাকার ও প্রসস্ত হতে থাকে এবং অস্থায়ীভাবে এর ভেনাস ডেনেজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এভাবে পেনিস দীর্ঘ, প্রসস্ত ও দৃঢ় হয়। এ অবস্থাকে পেনিসের ইরেকশন (উত্থান) বলা হয়। 

খ) পিচ্ছিল করন: মুত্রনালীর ও বালবোইউরেথ্রাল গ্ল্যান্ড হতে নিঃসৃত ক্ষরন দ্বারা। এর ফলে সঙ্গমপথ পিচ্ছিল হয় যাতে সঠিকভাবে সঙ্গম ক্রিয়া করা যায়। 

গ) সঙ্গম: ভ্যাজাইনার (স্ত্রী সঙ্গম অঙ্গ) অভ্যন্তরে প্রবেশ করণ এবং সেখানে অবস্থানরত অবস্থায়  পেনিসের ভেতরগামী দিকে ও বহির্গামী সঞ্চালন। 

ঘ) প্রেরণ ও স্খলন: ভ্যাজাইনাতে পেনিস সঞ্চালন করতে থাকলে পুরুষের যৌনতৃপ্তি ( স্নায়বিকভাবে) আসে এবং যৌণতৃপ্তি হলে এপিডিডাইমিস হতে মুত্রনালী পর্যন্ত বহিমুখী সন্চালন ঘটতে থাকে ফলে মুত্রনালীতে  সিমেন (বীর্য) পৌছে যায় এবং সিমেন (বীর্য) মুত্রনালী থেকে বাইরে বের হয়ে আসে অর্থাৎ ইজাকুলেশন বা  স্খলন  বা বীর্যপাত ঘটে।  ইজাকুলেশন বা স্খলন বা বীর্যপাতের  স্বাভাবিক সময়  ( ভ্যাজাইনাতে পেনিস সঞ্চালনরত অবস্থায় )  ৩-৫ মিনিট। 



পুরুষের প্রজননক্ষম হওয়ার লক্ষণ

পুরষ প্রজনন হরমোনের প্রভাবে  বয়সন্ধিকালে মানবদেহে কিছু শারীরিক বা আচরণগত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় যা তার প্রজনন সক্ষমতাকে নির্দেশ করে।  এই পরিবর্তনগুলো হলো-

  1. বাহ্যিক জননাঙ্গের বৃদ্ধি
  2. পেনিস (শিশ্ন বা পুরুষাঙ্গ বা পুরুষ লিঙ্গ) দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে' বৃদ্ধি পায়। পেনিসের ইরেকশন ক্ষমতা (উত্থিত বা শক্ত হওয়া) বৃদ্ধি পায়। 
  3. স্ক্রোটাম বা অন্ডথলির বর্ণ পরিবর্তন হয় এবং ভাজ বিশিষ্ট হয়।
  4. আভ্যন্তরিন জননাংগের বিকাশ ও বৃদ্ধি ঘটে। 
  5. কন্ঠস্বরের পরিবর্তন- স্বর গভীর/ভারী হয়।
  6. লোম উদ্গমন-দাড়ি, গোঁফ; বগলের লোম , নাভীর নিচের লোম, দেহের অন্যান্য স্থানের লোম। 
  7. দেহ গঠন- পেশীর বৃদ্ধি, কাঁধ প্রসস্ত হয়।
  8. ত্বকের পরিবর্তন- সিবাসিয়াস গ্রনি'র ক্ষরন বেড়ে যায় ফলে ত্বক তৈলাক্ত হয়, ব্রণ দেখা যায়। 
  9. মানসিক পরিবর্তন- বিপরীত লিঙ্গের (নারীদের) প্রতি আকর্ষন। 


স্বপ্ন দোষ বা ঘুমের মধ্যে ইজাকুলেশন বা বীর্যপাত হওয়া (কিংবা অন্য কোন ভাবে বীর্য পাত হওয়া ) একটি  সুনিশ্চিত লক্ষণ। তবে স্বপ্নদোষ ( বীর্যপাত )  না হলেও যদি উপরোক্ত লক্ষণ থাকে তবেও সে পুরুষকে প্রজননক্ষম বলা যেতে পারে।



এই পর্বের এখানেই সমাপ্তি । আগামী পর্বে রয়েছে স্ত্রী প্রজনন অঙ্গ সম্পর্কে ধারণা। 



সতর্কীকরণ 

[ সর্বস্বত্ত সংরক্ষিত; কপিরাইটকৃত রচনা।  রচয়িতার লিখিত অনুমতি ব্যতিত এই রচনা বা এর কোন অংশ বিশেষের অনুবাদ বা কোন প্রকারে এর অনুলিপি (যেমন- মুদ্রণ, ফটোস্ট্যাট, কম্পিউটার কম্পোজ বা অন্য কোন উপায়ে) তৈরি, সংরক্ষণ, বিক্রয়, বিতরণ, নিয়মবহির্ভূতভাবে কোন পুস্তকে বা প্রকাশনায় ব্যবহার কিংবা ওয়েব সাইটে প্রকাশ বাংলাদেশ কপিরাইট আইন ২০০৫ অনুযায়ী  শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।  ] 

তবে কোনরূপ পরিবর্তন না করে লিংক হিসেবে ফেসবুকে বা ইন্টারনেটে শেয়ার করা যাবে। 
কপি-পেস্ট আইনত দন্ডনীয় বলে বিবেচিত হবে ।





No comments:

Post a Comment